☰ |
|
অর্থ-বাণিজ্য |
বদরুল আলম আগে থেকেই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ডেবেনহ্যামসের। কভিড এসে আরো নাজুক করে তোলে তাদের পরিস্থিতি। এখন ব্যবসা বিক্রি করে দিতে ক্রেতা খুঁজছে ডেবেনহ্যামস। সেই কারখানাগুলোকে দেয়া পোশাকের ক্রয়াদেশও বাতিল করে তারা, যার মধ্যে বাংলাদেশের অনেক কারখানাও আছে। কেবল প্রাইমার্ক বা ডেবেনহ্যামস নয়, মহামারীর কারণে ইউরোপ-আমেরিকার আরো অনেক প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ সময় বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ হারিয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। বিজিএমইএর হিসাব বলছে, কভিডের প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে গত বছরের এপ্রিল নাগাদ প্রায় সোয়া তিন বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো বছরের রফতানিতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএর সংকলন করা পরিসংখ্যান বলছে, সদ্যসমাপ্ত বছরে বিশ্ববাজারে মোট ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও ২০১৯ সালে রফতানি হয় ৩ হাজার ২৯৩ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে রফতানি কমেছে ১৭ শতাংশ বা ৫৬১ কোটি ডলারেরও বেশি। মূলত কভিডের প্রভাবেই রফতানি এত কমে যায় বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। পোশাক খাতের মালিকদের বিকেএমইএর নেতারা বলছেন, কভিড-১৯-এর ছোবলে সারা বিশ্বের অর্থনীতি এখন পর্যুদস্ত। স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতির চাকাকে চলমান রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তার উদ্যোক্তাদের। সংকুচিত হয়ে পড়েছে কর্মক্ষেত্র। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তার কোনো পূর্বাভাস নেই। চরম প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সিংহভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সরকার ঘোষিত সহযোগিতা নিয়ে পোশাক শিল্প মালিকরা কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারখানায় পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ নেই, নেই আগামী দিনগুলোতেও স্বাভাবিক কার্যাদেশ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।
চীনের উহানে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাত প্রথমে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটে পড়ে। কারণ দেশে তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্যের আনুমানিক ৬০ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। দেশটি থেকে নিট পণ্যের কাঁচামাল আমদানি হয় ১৫-২০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও রফতানি গন্তব্যগুলোয় চাহিদার সংকট তৈরি হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রফতানি গন্তব্য আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতিটি দেশ এখনো কভিড-১৯-এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করছে। এ অবস্থায় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিজিএমইএ বলছে, বাতিল-স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশের ৮০ শতাংশের বেশি পুনর্বহাল হলেও সেগুলোর সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আর কারখানা মালিকরা বলছেন, বাতিল বা স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশগুলোর কিছু ফিরে এসেছে। আবার নতুন ক্রয়াদেশও পেতে শুরু করেছে কারখানাগুলো। কিন্তু তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বণিক বার্তাকে বলেন, ইউরোপ কভিডের নতুন ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে। তাই ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, গ্রিসসহ বেশকিছু দেশ লকডাউন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ইউরোপে পোশাকের চাহিদা যদি আরো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তাহলে আমাদের জন্য খাপ খাইয়ে নেয়াটা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। ইউরোপ আমাদের প্রধান বাজার হওয়ায় এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কভিড-১৯ আমাদের কারখানাগুলোর মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির কারণ। |
অর্থ-বাণিজ্য |
সর্বশেষ |
xxxxxxxxxxxxxxxxx |