সম্পাদকীয় আসন্ন শীতের শুরুতে দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের মানুষ ট্রেনে-বাসে চলাচল করছেন কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। হাটে-বাজারেও কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এসব কারণে দেশে পুনরায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কারিগরি পরামর্শ কমিটি দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি সংক্রমণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরও সংক্রমণ ফের বেড়ে গেছে এবং দেশ দুটি বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছে। আমাদের দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। শীতকালে যে তাপমাত্রা থাকে তা করোনা বিস্তারের জন্য অনেকখানি অনুকূল। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ এড়াতে আরও বেশি পরিমাণে করোনা পরীক্ষা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। করোনার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি এবং করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই নমুনা পরীক্ষার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনার সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য রোগীর আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিদেশ থেকে যারা ফিরছেন তাদের পরীক্ষা ও কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। আইসোলেশন কেন্দ্র চালু রাখা এবং করোনা হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা সংকোচন না করে যা আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে তা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। প্রথমদিকে দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হলেও যতই দিন গড়াচ্ছে ততই মানুষের উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। এখন দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে প্রথম ধাক্কার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দুটো অনুশাসনও দিয়েছেন। মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে পদক্ষেপ নেবে সরকার। পাশাপাশি সংক্রমণ রোধে রোডম্যাপ তৈরি ও প্রস্তুতির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জোহর ও মাগরিবের নামাজের সময় মসজিদ থেকেও প্রচার করার জন্য বলা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ করা সবসময়ের জন্যই উত্তম। জনবহুল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে করোনা ঝুঁকি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। সুতরাং সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ যেন আমাদের কাবু করতে না পারে তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে এখন থেকেই। স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যথাযথ পদক্ষেপ এখন থেকেই নিতে শুরু করবে- এই কামনা।
|