অনলাইন ডেস্ক সমাজ আর সরকার মানতে চায়নি, আদালতও সায় দেয়নি৷ এতে দমে না গিয়ে দেশের প্রথম নারী কাজী বা নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ির মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা৷ মিডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আয়েশা বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব, নারীর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করব৷’’
৩৯ বছর বয়সি আয়েশা ফুলবাড়ীর দারুল সুন্নাহ সিনিয়র সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেন৷ স্বামীর মত তিনিও হোমিও চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে কাজীদের বিয়ে পড়াতে দেখে আয়েশার কাজী হওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল, কিন্তু বাংলাদেশে তো কোনো মেয়ে কাজী নেই! বড় হওয়ার পর তিনি দেখলেন, মেয়েরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না- এমন কথা কোথাও বলা নেই৷ তাই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়েই ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন তিনি৷ নিয়ম মাফিক যাচাই-বাছাই শেষে লাইসেন্স মঞ্জুরির স্থানীয় উপদেষ্টা কমিটি ২০১৪ সালে যে তিনজনের নাম আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল, তার প্রথমেই ছিল আয়েশা সিদ্দিকার নাম৷ কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় একজন নারীকে নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স দিতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় আয়েশার আইনি লড়াই৷ সরকারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তিনি হাই কোর্টে গেলে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার আবেদন খারিজ করে দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ৷ সেই পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়৷
আয়েশা বলেন, ২০০৯ সালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিধিমালায় কোথাও বলা হয়নি যে কেবল পুরুষই নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে৷ সেখানে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, তার সবগুলোই তার আছে৷ তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেই নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশে রাজনীতি, বিচারাঙ্গণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মত কাজেও যেখানে মেয়েরা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিয়ে নিবন্ধনের কাজটিতে কেন তাদের ‘অযোগ্য’ করে রাখা হবে, সেই প্রশ্ন তার৷
|